তেজপাতার উপকারিতা,চুলের জন্য তেজপাতার উপকারিতা,তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা,তেজপাতার ব্যবহার,
তেজপাতা চেনেন না এমন লোক বোধ হয় আমাদের দেশে নেই। যারা দুধ ছাড়া চা পছন্দ করেন, তাদের অনেকেই চা-য়ে তেজপাতা দেওয়াটাকে ভালো মনে করেন । কেউ কেউ গলা বসে গেলে তেজপাতার চা খেতে চান। এছাড়াও শরীরের রং ফিরিয়ে আনার জন্য, ক্ষুধা বাড়াতে অনেকে খাবারে তেজপাতা পছন্দ করেন। তেজপাতা খেলে নাকি রক্তের শক্তি বাড়ে। তা যাই হোক, শরীরের প্রয়োজনে তেজপাতার উপকারিতা অনেক।
তেজপাতাগাছ আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকাতে হয়। এই গাছ কিছুটা মোটা এবং শক্ত। গাছটি মাঝারি মাপের। তেজপাতাগাছ থেকে একটি গন্ধ বের হয়। পাতাগুলো ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। তেজপাতার পাতা প্রথমে লাল-খয়েরি এবং পরে সবুজ দেখায়। মার্চ-এপ্রিল মাসে তেজপাতা গাছে ফুল ও ফল আসে। ফল পেকে গেলে দেখতে কালো হয়।
তেজপাতা গাছের ছাল খেলে পেটফাঁপা, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগ ভালো হয়। এছাড়া পাকস্থলির ক্ষমতা বাড়াতে, জরায়ুর ব্যথা, প্রস্রাবের কষ্ট, বিছার হুলের ব্যথা কমাতে তেজপাতা গাছের ছাল ব্যবহার করা হয়। তেজপাতার চিকিৎসা দিয়ে আমবাত, বাত ইত্যাদি অনেক অসুখ ভালো করা যায়। তেজপাতার ফল থেকে এক ধরনের তেল পাওয়া যায়, যা অনেক অসুখ ভালো করতে কাজে লাগে ।
তেজপাতাদিয়ে অনেক সাধারণ রোগ ভালো করা যায়:
ঘুমের ঝিমুনি :
ঘুমের ঝিমুনি একটি অসুখ ।
এ সমস্যা দূর করতে তেজপাতার চিকিৎসা নেয়া যায়। প্রথমে ৫-৭ গ্রাম তেজপাতা ৩-৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে থাকতে চুলা থেকে নামাতে হবে। তারপর একটু ঠাণ্ডা হলে সেটিখেতে হবে। এভাবে দিন পনেরো খেলে সমস্যা দূর হবে।
চুলকানি :
কারো চুলকানি হলে, ৫ গ্রাম তেজপাতা বেটে ৫/৬ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তারপর রোজ ২-৩ বারে সিদ্ধ পানিটুকু খেয়ে নিতে হবে। এভাবে কয়েকদিন খেলে চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
চেহারায় লাবণ্য :
চেহারায় লাবণ্য বাড়াতে তেজপাতার ভেষজ চিকিৎসা নেয়া যায় । ৫-৬ গ্রাম তেজপাতা বেটে থিতিয়ে নিয়ে ২ কাপ গরম পানিতে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে । এরপর ছেঁকে নিয়ে দিনে দু'বার খেতে হবে। এইভাবে দিন পনেরো খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
লাল রঙের প্রস্রাব :
বদহজম হলে, রাত জাগলে, খাবার-দাবারে অনিয়ম হলে কিংবা বেশি ছোটাছুটি করলে অনেকের প্রস্রাব লাল রঙের হয়ে থাকে। এ রকম হলে ৫-৭ গ্রাম তেজপাতা থিতিয়ে নিতে হবে। তারপর ২-৩ কাপ গরম পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং দিনে ২ বার খেতে হবে। এভাবে ৩/৪ দিন খেলে প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
স্বর ভাঙা :
সর্দির কারণে অনেকের গলার স্বর ভেঙে যায়। তখন ৫-৭ গ্রাম তেজপাতা থিতিয়ে ৩-৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। তারপর এক কাপ পানি থাকতে চুলা থেকে নামিয়ে ভালো মতো ছাঁকতে হবে। ৫-৬ ঘন্টার মধ্যে ৩/৪ বারে একটু একটু করে খেলে গলার স্বর আবার ভালো হয়ে যাবে।
দাদ : দাদ হলে তেজপাতার চিকিৎসা অনেক উপকারী। ৫ গ্রাম তেজপাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ করুন। তারপর পানিটা ছেঁকে নিয়ে খেয়ে নিন। এছাড়া ওই সিদ্ধ করা পানিতে তুলা ভিজিয়ে নিয়ে দাদের জায়গাটা মুছে ফেলুন । এভাবে কয়েকদিন করলে দাদে উপকার পাওয়া যাবে।
অৰুচি : খাওয়াতে অরুচি দেখা দিলে, তেজপাতা পানিতে সিদ্ধকরুন। এবার ছেঁকে সেই পানি দিয়ে কুলি করলে অরুচি সেরে যায়।
গায়ে দুর্গন্ধ : কখনো কখনো ঘেমে গেলে
মানুষের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এতে অস্বস্তিতে পড়তে হয় । অথচ তেজপাতা ভালো করে বেটে গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায় ।
বেশি ঘাম হওয়া : শরীরে ঘামের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিংবা ঘামাচি হলে তেজপাতা বাটা গায়ে মেখে আধা ঘন্টা পর গোসল করতে হবে। এতে করে বেশি ঘামাটা বন্ধ হবে এবং ঘামাচি দূর হয়ে যাবে।
ফোঁড়া : গরমের দিনে কারো কারো ফোঁড়া হয়। এসব ফোঁড়ায় তেজপাতা বেটে লাগাতে পারেন। এতে ফোঁড়ার ব্যথা ও সেই সাথে ফোঁড়ার ভেতরে যে চাকার মতো আঁটি থাকে, তা কমে যাবে।
তেজপাতা আমাদের নানা উপকারে আসে। তাই, আমাদের বাড়ির আশেপাশে দু'য়েকটা তেজপাতা গাছ লাগাতে পারি। এতে আমাদের রান্নার কাজও চলবে, সেই সাথে ঘরে বসে অনেক অসুখ-বিসুখের ঔষধও পাওয়া যাবে । তাই আসুন-না আজ-ই একটি তেজপাতা গাছ লাগাই ।